Friday, August 2, 2019

নিজের পড়া বিষয় ও সার্বিক প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে জেনে নিন

নিজের পড়া বিষয় ও সার্বিক প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে জেনে নিন
পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ছয় কিস্তিও ধারাবাহিকের শেষ পর্বে সার্বিক প্রস্তুতি। লিখেছেন ৩৬তম বিসিএসে অ্যাডমিন ক্যাডারে প্রথম ইসমাইল হোসেন সাধারণ ও প্রফেশনাল উভয় ক্যাডারে আবেদন করলে অনার্স ও মাস্টার্সের পঠিত বিষয়ের ওপর অংশ নিতে হয় ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায়। শুধু প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারে আবেদন করলেও অংশ নিতে হয় এ পরীক্ষায়। ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র থাকে। ৪ ঘণ্টার এ পরীক্ষায় একটি উত্তরপত্রেই উত্তর করতে হয়। এখানে সাধারণত অনার্স ও মাস্টার্সের পঠিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন থাকে। তাই যারা নিজের বিষয়ে ভালো ধারণা রাখেন বা ভালো পড়াশোনা করেছেন, তারা খুব সহজেই ভালো করতে পারবেন।
► দেখে নিন সিলেবাস নিজ বিষয়ের সিলেবাসটি প্রথমে সংগ্রহ করে নিতে হবে। প্রথম পত্রে সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মৌলিক বিষয়গুলো থাকে। দ্বিতীয় পত্রে অনার্স ও মাস্টার্সের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থাকে। প্রশ্ন বিভিন্নভাবে আসতে পারে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, ব্যখ্যামূলক প্রশ্ন, বিবৃতিমূলক প্রশ্ন, টীকা। প্রশ্নের প্যাটার্ন জানার জন্য বিগত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করতে হবে। সিলেবাস পাওয়া যাবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd)।
► প্রস্তুতি ও লেখার কৌশল
► প্রথমেই বিগত বিসিএসের লিখিত প্রশ্নগুলো দেখতে হবে। নিজ বিষয়ের পরীক্ষায় সাধারণত বিগত প্রশ্ন থেকে কিছু প্রশ্ন হুবহু আসে। কিছু প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে আসে। অনার্স ও মাস্টার্সের এত এত টপিক ২০০ নম্বরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুতিতে একটু বেগ পেতে হয়। কিন্তু বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে বোঝা যায়, কোন টপিকগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
► লিখিত জেনারেল পরীক্ষার পর বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাঝে একদমই সময় পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিজ বিষয়ের কোনো প্রস্তুতি নেন না। জেনারেল বিষয়গুলোতেই পুরো সময় ব্যয় করেন। পরবর্তী সময়ে জেনারেল পরীক্ষার পর নিজ বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই লিখিত প্রস্তুতির সময় একটু একটু করে নিজ বিষয়ের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
► নিজ বিষয়ের উচ্চ মাধ্যমিক বই সংগ্রহ করে সেখান থেকে মৌলিক বিষয়গুলো দেখে নিতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের নমুনা প্রশ্নগুলো অনুশীলন করলে প্রস্তুতি কাজে দেবে।
► অনার্স ও মাস্টার্সের পঠিত বই থেকে সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি টপিক দেখতে হবে। কোন টপিক কোন বই থেকে পড়ছেন, তা সিলেবাসের প্রতিটি টপিকের পাশে লিখে রাখলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে বের করা যায়।
► পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিষয়ের সম্মান তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন।
► পরীক্ষায় বাংলা বা ইংরেজি যেকোনো ভাষায় উত্তর লেখা যায়। প্রশ্ন সাধারণত বাংলায়ই হয়। তবে যাঁরা ইংরেজি ভার্সনে পড়েছেন, তাঁদের ইংরেজিতে লেখাই ভালো।
► সার্বিক প্রস্তুতি এবার আসি লিখিত পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার মাধ্যমে ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলী প্রস্তুতির বিকল্প নেই। অগোছালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় পাস করা সম্ভব; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
► মৌখিক পরীক্ষার নিয়ন্ত্রণ প্রার্থীর হাতে না থাকায় এখানে কেমন নম্বর পাওয়া যাবে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত একটি ব্যাপার। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার নিয়ন্ত্রণ একজন প্রার্থীর হাতে থাকে। তাই মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর (১০০ নম্বর) ধরে নিয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য টার্গেট করতে হবে। যে নম্বর টার্গেট করা হয়েছে, তা পাওয়ার জন্য কোন বিষয়ে কত নম্বর পেতে হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে। আলাদাভাবে প্রতিটি বিষয়ের একটি টার্গেট নম্বর থাকলে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নেওয়াও সহজ হয়।
► লিখিত পরীক্ষার ৬টি বিষয়ের মধ্যে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজিতে ভালো নম্বর তোলা তুলনামূলক সহজ। এই ৩টি বিষয়ে বেশি নম্বর তুলতে পারলে অন্যান্য বিষয়ের ওপর চাপ কমে।
► প্রতিটি বিষয়ের কিছু টপিক থাকে, যেখানে পূর্ণাঙ্গ নম্বর পাওয়া সম্ভব। এ ধরনের টপিকগুলো খুঁজে বের করে যত্নসহকারে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব। যেমন— অ) বাংলায় ব্যাকরণ, সাহিত্য, অনুবাদ ইত্যাদি টপিকে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। আ) ইংরেজিতে গ্রামার, passage-এর short question, অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা)। ই) সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস টেকনোলজি। ঈ) গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতায় একটু বুঝে প্রস্তুতি নিলে ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর তোলা যায়। উ) বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি সম্পর্কিত প্রশ্ন ভালো লিখতে পারলে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। ঊ) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে conceptual issues-এ ভালো নম্বর তোলা যায়।
► লিখিত প্রস্তুতির জন্য সময় কম পাওয়া যায়, তাই প্রথমেই সিলেবাস একবার দ্রুত শেষ করতে হবে। প্রথমবার শেষ করার পর সময় পাওয়া সাপেক্ষে ২ থেকে ৩ বার রিভাইস করতে হবে।
► প্রস্তুতি দুইভাবে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন সব বিষয়ের কিছু টপিক পড়া অথবা একটি করে বিষয় শেষ করা। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বেশি কার্যকর।
► প্রতিদিন কিছু সময় বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজির জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। অথবা কোনো বিষয় পড়তে পড়তে বিরক্তি লাগলে গণিত বা ইংরেজি অনুবাদ করা যেতে পারে।
► লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার আরেকটি উপায় হচ্ছে, প্রস্তুতির সময় প্রচুর ডেমো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট দেওয়া। পরীক্ষা দিলে নিজের দুর্বলতা ও ভুলগুলো জানা যায়।
► লিখিত পরীক্ষায় যেহেতু অনেক লিখতে হয়, তাই দ্রুত লিখতে পারা জরুরি। প্রতিদিন ঘড়ি ধরে লেখার অভ্যাস করলে কাজে দেবে।
► বাংলা ও ইংরেজি রচনার ক্ষেত্রে একসঙ্গে প্রস্তুতি নিলে আলাদাভাবে পড়তে হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রথমে টপিক নির্বাচন করে টপিকভিত্তিক তথ্য, উপাত্ত, কোটেশন, রেফারেন্স, চিত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে লিখে রাখলে উভয় ভাষায়ই লেখা সম্ভব।
► বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে প্রশ্নভিত্তিক উত্তর না পড়ে টপিকভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে ওই টপিকের ওপর যেকোনো প্রশ্ন হলে তা লিখে আসা সম্ভব।
► প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একটি খাতায় টপিকের নাম লিখে তার পাশে ওই টপিকটি কোন বই থেকে পড়া হয়েছে, তা পৃষ্ঠা নম্বরসহ লিখে রাখতে শেষ সময়ে রিভাইস দেওয়া সহজ হবে।
► লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে আসতে হবে। কোনো প্রশ্ন ছাড়া যাবে না। কারণ লিখিত পরীক্ষায় ০.৫ নম্বরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সময় ব্যবস্থাপনা করতে পারলে সব প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব।
► শেষ সময়ের প্রস্তুতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শেষ সময়ে ভালো রিভাইস না হলে পরীক্ষায় এর খারাপ প্রভাব পড়ে। আবার প্রথম দিকে তেমন ভালো প্রস্তুতি না থাকলেও শেষ সময়ের ভালো প্রস্তুতি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং পরীক্ষায় এর ভালো একটি প্রভাব পড়ে। তাই শেষ সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করতে হবে।

No comments:

Post a Comment