ফ্রিল্যন্সিং , যেন লোকাল ট্রেনের কঠিন যাত্রা
বেশ অনেক বছর আগের কথা। তখন অনার্স পড়ি, থাকি উপজেলাতে। প্রতিদিন শহরে আসতে হত ক্লাশ করার জন্য। কলেজের শুরুর দিকের কয়েক বছর লোকাল ট্রেনে যাতায়েত করেছি ক্লাশ করার জন্য। মনে আছে ফজরের সময় সাইকেলে করে প্রায় ০৫ কিঃমিঃ দূরে ষ্টেশনে যেতাম, সেখানে একটা বাড়িতে সাইকেল রেখে লোকাল ট্রেনে করে শহরে পৌছাতাম। ক্লাশ শেষ করে দুপুরের পরে বা বিকেলে আবার ট্রেনে করে উপজেলা ষ্টেশন, এরপর সাইকেলে করে বাসায়। এভাবে প্রায় আড়াই বছর কলেজে ক্লাশ করেছি।
বেশির ভাগ সময় লোকাল ট্রেনে যাতায়েত করেছি। যাদের লোকাল ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে শুধু তারাই বুঝতে পারবেন লোকাল ট্রেনে যাত্রা কাকে বলে উদাহরণ দেই। ষ্টেশনে ট্রেন এসেছে। ট্রেনে আগে থেকেই যাত্রীতে ভর্তি। এদিকে ষ্টেশনে যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। সবাই ট্রেনে চড়ার চেষ্টা করছে। হয়ত একজন যাত্রি ট্রেনের দরজার কাছে গিয়েছে, দরজার মুখে যেসব যাত্রি দাড়িয়ে আছে সবাই নিষেধ করছে, ভাই অন্যদিকে যান। দেখেন না দাঁড়ানোর কোন যায়গা নেই নিচে দাঁড়ানো যাত্রীর কি করুন আকুতি, ভাই একটু যায়গা দেন, আমাকে যেতেই হবে, এর পরে আর কোন ট্রেন নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। তার পরেও কারো মন গলে না। এবার নিচে দাঁড়ানো যাত্রি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। জোর করে দরাজার হাতল ধরে উঠে পড়ে। উপরের সবাই প্রতিবাদ করে, অনেক ঠেলাঠেলির পর যাত্রি দরজায় দারাবার জায়গা পায়। মুখে তার বিজয়ের হাসি
মজার ব্যাপার হচ্ছে যায়গা পেয়ে যাবার পর, অন্য কোন যাত্রি উঠার চেষ্টা করলে, সেও একই আচরণ করা শুরু করে। দেখেন না ভাই দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই , অন্য দিকে দেখেন। অথচ কিছুক্ষণ আগে সেও নিচে দাঁড়ানো ছিল, উঠার জন্য সেও অনেক রিকয়েস্ট করেছিল। সেই কথা সে বেমালুম ভুলে যায়। এ যেন এক চেইন রিআ্যাকশন, অনেক কস্টে একবার উঠতে পারলেই হল। এরপর যেন আর কেউ না উঠতে পারে সেই চেষ্টা। বগির ভিতরে জায়গা খালি থাকলেও কাউকে ঢুকতে দেয়া যাবে না। ট্রেন একসময় ছেড়ে দেয়। অনেক লোক উঠতে না পেরে পরের ট্রেনের জন্য ষ্টেশনে অপেক্ষা করে। পরের লোকাল ট্রেনে আবার উঠার চেষ্টা করে। যত দিন যায় লোকাল ট্রেনে উঠা ততই কঠিন হয়ে পড়ে।
ফ্রিল্যন্সিংও অনেকটা এই লোকাল ট্রেনের মত। বগিটাকে আমরা মার্কেটপ্লেস মনে করতে পারি। এতে উঠতে চাইলেও, আগে থেকে যারা আছে তারা আপনাকে উঠতে দেবে না। কত অজুহাত, কত অসহযোগিতা, কিন্তু আপনার ইচ্ছা যদি প্রবল থাকে, তবে আপনি ঠিকই জায়গা করে নেবেন। কিন্তু একবার জায়গা করে নেয়ার পর আপনিও হয়ত তাদের মত হয়ে যাবেন, অন্য কেউ যেন উঠতে না পারে তারজন্যো প্রানপণ চেষ্টা করবেন। মনে হতে পারে নতুন আরেক জন যদি উঠে তবে নিজের সমস্যা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে ঠিক করেছে উঠবে, সে কিন্তু উঠেই ছাড়বে। যেমন আমি কিন্তু আমার আড়াই বছরের ট্রেন যাত্রায় খুব কমই বার্থ হয়েছি ট্রেনে উঠতে
কাজেই নতুনদের প্রতি বলব ফ্রিল্যান্সিং অনেকটা ট্রনের বগির মত। কেউ আপানাকে ছাড় দেবে না। আপনাকে যায়গা করে নিতে হবে। যদি হাল ছেড়ে দেন তবে আর উঠতে পারবেন না। সাফল্যের ট্রেন আপনাকে ষ্টেশনে রেখেই চলে যাবে। সংকল্প দৃঢ় হলে অবশ্যই ট্রেনে চরতে পারবেন। তবে অনুরোধ থাকবে নিজে ওঠার পর, অপর জনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন যেন সেও উঠতে পারে। অন্যকে সাহায্য করলে স্রস্টার রহমত আপনার উপর বর্ষিত হবে। আপনার যাত্রা আরও সহজ আর সাফলমন্ডিত হবে।
সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ!
No comments:
Post a Comment