Monday, July 1, 2019

গরুর মাংসে চর্বি নাকি সয়াবীন তেলে?

আসুন একটু সময় লাগাই, বহুত ফায়দা হবে, ইনশাআল্লাহ্ 
গরুর মাংসে চর্বি নাকি সয়াবীন তেলে? চর্বি আমাদের সরিরের জন্য কতটুকু খারাপ এবং ভালো।
চর্বির কারণে বুকে কি ব্লক হয়? নাকি হয়না? কতটুকু পর্যন্ত এলাউড? আসুন ডিটেইলস জেনে নেই।
চর্বির অনেক প্রকারভেদ আছে, চর্বি মানেই খারাপ না। চর্বি বা তেল একটা ন্যাচারাল খাদ্য, মানুষ হাজার বছর ধরে খেয়ে আসছে, এটা সাদা চিনির মতন না, তখন কিন্তু কারো বুকে ব্লক হয়নি, কিন্তু গত ১০০ বছর ধরে হচ্ছে, কারণ কি?
১- প্রথমে আসি কোলেস্টেরল প্রসঙ্গে, কোলেস্টেরল হল চর্বিতেলের সেই অংশ যা বুকের আর্টারীতে জমে ব্লক হয়, কিন্তু কোলেস্টেরলের প্রকারভেদ আছে।
শুধুমাত্র এল ডি এল কোলেস্টেরল টা খারাপ যেটা যেটা বুকে জমে। কিন্তু অন্য কোলেস্টেরল ( যেমন :- এইচ ডি এল ) কিন্তু খারাপ না, ওগুলো বুকে জমেনা। এইচডিএল কোলেস্টেরল তো ভাল কোলেস্টেরল, যেটা খারাপটাকে ধ্বংস করে।
তাহলে, আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, যে আপনি যেন খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) টা লিমিট করতে পারেন্, মানে কম খান। আর কিছুনা।
২- তেল বা চর্বির দুই নাম্বার কনসার্নড জিনিস হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মানে ফ্যাট পরমানুটার কার্বন লিংকে হাইড্রোজেন বসে এটা স্যাচুরেটেড হয়ে গেছে, কোন জায়গা খালী নাই তার, এই স্যাচুরেটেড ফ্যাটের একটা ছোট অংশ 'খারাপ কোলেস্টেরল' এ পরিণত হয়, হজমের পর, তাই এটা কম খেতে হবে, লিমিট টা পরে বলছি।
৩- এবার আসে সবচে বিষাক্ত ফ্যাটে, যেটা ন্যাচারাল না, যেটা সমগ্র পৃথিবীতে বুকে ব্লকের অন্যতম প্রধান কারণ সেটা হল ট্রান্স ফ্যাট।
দুটো স্যাচুরেটেড ফ্যাট অনু যুক্ত হয়ে এই ট্রান্স ফ্যাট হয়, মানে এটা ডাবল স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এটা ন্যাচারালী কোন তেলেই সেভাবে থাকেনা, ট্রেস এমাউন্ট থাকে যেটুকু মানুষের ক্ষতি করেনা।
কিন্তু এই ফ্যাট ডাইরেক্ট বুকের ভিতরে গিয়ে জমে ব্লক হয়, সামান্য একটু খেলেই ব্লক। এটা একই সাথে 'খারাপ কোলেস্টেরল'কে বৃদ্ধি করে, আবার ভাল কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়, একই সাথে এই ট্রান্সফ্যাট ইনফ্ল্যামেটরী, মানে যেখানে জমে , সেই জায়গাটা ফুলে যায়।
মানে সামান্য একটু ট্রান্সফ্যাট মনে করেন বুকের আর্টারীতে গিয়ে জমলো, মনে করেন ১০% ব্লক হবার কথা, কিন্তু এটা ফূলে গিয়ে ( ভলিউম এক্সপ্যানশন ) ৩০% হয়ে যাবে আরকি।
তার মানে নরমালী ৬০% কে সে ফুলিয়ে ১০০% ব্লক করে আপনাকে সিঙ্গাপুরে পাঠািয়ে দিবে।
তার মানে সবচে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাট হল ট্রান্সফ্যাট, অন্য ফ্যাট গুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ।
সাদা চিনি হল এক প্রকার বিষ, কখন বিষ হয়? যখন পরিমান বেশী হয়, ২-৩ চামচ পজন্ত ঠিক আছে, WHO বলে ৬ চামচ পজন্ত ঠিক আছে, সাদা চিনি হল স্বল্প মাত্রার বিষ।
সেই তুলনায় ট্রান্স ফ্যাট হল বিষ এ সায়ানাইড, জায়গাতে খাবেন, জায়গাতে বুকে ব্লক।
USDA/FDA এর লিমিট অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাট এর দৈনিক লিমিট হল মাত্র ২.০ গ্রাম, মানে এর বেশী খেলেই বুকে ব্লক হবার সম্ভাবনা তৈরী হবে।
কিন্তু আমরা কতটুকু খাচ্ছি? আর কতটুকু গরু থেকে খাচ্ছি? কতটুকু সয়াবীন থেকে খাচ্ছি?
এই ট্রান্সফ্যাট কেন আমাদের ফুড সাইকেল এ আসলো? এটা তো সায়ানাইড, উচ্চ মাত্রার বিষ। এমনটা তো হবার কথা না।
ঘটনা হল গত শতাব্দীতে সয়াবীন সহ সকল ভোজ্য তেল ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড প্রডাকশনে যায়, ইন্ডাস্ট্রি কিন্তুু তেল প্রক্রিয়াজাত করে মেশিনে, ঘানি ভাঙ্গা তেলের মতন সাভাবিক প্রক্রিয়া নয়।
ইন্ডাস্ট্রি তেলকে সুন্দর, ঘন এবং বহুদিন স্বাদ গন্ধ অপরিবর্তীত রাখতে তেলের সাথে হাইড্রোজেন গ্যাস মিশায়।
'যেকোন তেল + ক্যাটালিস্ট + বায়বীয় হাইড্রোজেন' = ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড ভোজ্য সয়াবীন/ক্যানোলা/ সানফ্লাওয়ার তেল, যেটা আমরা খাই এখন।
সয়াবীন হোক বা ক্যানোলাই হোক বা সানফ্লাওয়ারই হোক হাইড্রোজেন মেসানোর কারনে তেল বিষাক্ত হয়ে যায়।
উক্ত প্রসেস তেল উৎপাদনে গেলে ব্যাপক লাভ হয়, দ্রুততর প্রডাকশনে যাওয়া যায়, মানুষ কিনেও। ঘানী ভাঙ্গা তেল মাত্রাতিরিক্ত তরল ( সান্দ্রতা কম ) হয়, বেশী দিন সংরক্ষন করা যায় না, তাই ইন্ডাস্ট্রী সেটা পছন্দ করেনা। ইন্ডাস্ট্রী বাহির থেকে এক্সট্রা হাইড্রোজেন মিশায়, মনে করেন ওই হাইড্রোজেন হল বায়বীয় ফরমেটের ফরমালীন।
ইন্ডাস্ট্রির উদ্দেশ্য, হয়তো খারাপ না, একটু বেশী টাকা কামানো। কিন্তু যখন নরমাল আন স্যাচুরেটেড তেলের সাথে আপনি হাইড্রোজেন মিশাবেন, তখন ওই তেলের একটা বড় অংশ ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট হয়ে যায়, ওই হাইড্রোজেন পরমানু কার্বন লিংকের ফাকা জায়গা দখল করে বসে যায়।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট একটু খারাপ, কিন্তু ট্রান্সফ্যাট তো পুরা সায়ানাইড!
প্রতি দশ গ্রাম তেলে ৪-৫-৬ গ্রামই ট্রান্সফ্যাট হয়ে যেতে পারে, ডিপেন্ড করে আপনি কি পরিমান হাইড্রোজেন গ্যাস মিশালেন তার উপর।
ট্রান্সফ্যাট অন্য ভাবেও হয়, সেটা হল হোটেল বা রেন্তোরায় যখন একই তেলে দিনের পর দিন সিঙ্গারা, সামুচা সহ সব কিছু ভাজা হয়, যেটাকে আমরা পোড়া তেল বলি। তেল বেশী পুড়লে, বাতাসের হাইড্রোজেন এর সাথে বিক্রিয়া করে তা ট্রান্সফ্যাট হয়ে যায়। কাজেই বাহিরের ভাজা-পোড়া খাবার খাবেন না। সম্ভব হলে বাসায় বানিয়ে খান।
২০০৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ লোক বিনা কারণে হার্ট এটাক হয়ে মারা যাবার মূল কারণ হিসেবে ভোজ্য তেলে এই ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয়। খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বিষয়টি আবিষ্কার করেন এবং আমেরিকান সরকারকে ব্যাপক চাপ দেন।
পরে আমেরিকান সরকার চাপে পড়ে ২০০৬ সালে নতুন আইন করে, সেটা হল ভোজ্য তেলকে হাইড্রেজেনেটেড করতে গেলে খুব কম করতে হবে, বা করা যাবেনা। প্রতি তেলের ডিব্বায় ট্রান্স ফ্যাটের এমাউন্ট উল্লেখ করে দিতে হবে না হলে একশন। তেল ব্যবসা লাটে উঠেনো হবে এফডিএ এ্যাকশেনে যাবে।
সরকারী চাপে পড়ে তেল কোম্পানীগুলো ডিল করে, যে তারা প্রতি সার্ভিং তেলে ০.৫ গ্রামের কম ট্রান্সফ্যাট দিবে, এবং ০.৫ গ্রামকে রাউন্ডিং করে তারা লিখবে ০.০ গ্রাম।
প্রতি সার্ভিং তেল মানে মাত্র ১৫ গ্রাম তেল। আমেরিকায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত তেল গুলোতে প্রতি ১৫ গ্রামে ০.৫ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট থাকে। মানে ১০০ গ্রামে ৩.৫ গ্রাম, চিন্তা করেন শতকরা ৩.৫ % ট্রান্সফ্যাট আছে তেলে কিন্তুু লেখে ০ গ্রাম। কত বড় বাটপারি? হায় আমেরিকান লবি।
আমেরিকা তাও ভাল , আগে হয়তো ২০-৩০% ট্রান্সফ্যাট ছিল, ওইটা কমাইয়া ৩.৫% করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশ কি করতেছে? বাংলাদেশে তো কোন নিয়ন্ত্রণ নাই সরকারের, কোন আইন বা তার প্রয়োগও নাই।
তার মানে বাংলাদেশে যখন আমরা বাহিরের খোলা তেল খাচ্ছি, সামাণ্য একটু তেল থেকেই দিনে হয় ৮-১০-১২ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট খাচ্ছি, যেখানে দৈনিক লিমিট হল ২ গ্রাম। তার মানে কোন গরু না খেয়েই , জাস্ট তেলতেলে সবজি-পরোটা-সিঙ্গারা-সামুচা খেয়েই আমাদের অল্পবয়সে বুকে ব্লক হচ্ছে, সয়াবীন তেলে থাকা এই ট্রান্সফ্যাট এর জন্য।
আমেরিকানদের ডেটা অনুযায়ী একজন এভারেজ এমেরিকান, ১৯৯৬-২০০৬ সালে দিনে ৬ গ্রাম ট্রান্সফ্যাট খেয়েছেন, এবং লাখে লাখে লোক হার্ট এটাক হয়ে মারা গেছেন। এখন অবশ্য সবাই ব্যাপারটা জানে, সরকারও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশে আমরা কিন্তু সব দোষ ওই নিরীহ গরু-খাসীকেই দিচ্ছে, নিরীহ অবলা এই প্রাণীটির একটু চর্বি আছে, তাতে কিছুটা কোলেস্টেরল, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ট্রান্সফ্যাটও আছে, কিন্তুু এত বেশী না।
আর মানুষ কিন্তু গরু-খাসী প্রতিদিন খায় না, কিন্তু ভোজ্য তেল কিন্তুু প্রতিদিন খায়, USDA এর রেকমেন্ডেশন হল সপ্তাহে ৩৫০ গ্রাম গরু/খাসী খেলে কোন সমস্যা নাই, শর্ত হল এই গরুতে অতিরিক্ত ফ্যাট ( যেটা সীনার মাংস, ৩০% ফ্যাট ) হতে পারবেনা। নরমাল মাংস ( যেমন রানের মাংসে ১০% ফ্যাট ) হতে হবে।
মানে গরু যদি সপ্তাহে একদিন, ২ বেলা মিলে ৩৫০ গ্রাম খান, চর্বির দলাগুলো না খান, তাহলে তাতে হার্টে ব্লক হবার সম্ভাবনা নেই। মানে প্রায় ১০ টুকরা, মাঝারি পিছ, প্রতি বেলা ৫ পিছ, এর বেশী খেলে ব্লক হবার ঝুঁকিতে পড়বেন।
এভাবে আজীবন খেলেও কোন ব্লক হবার কথা নয় (ইউ এস হার্ট এসোসিয়েশন)। যদি চর্বি বেশী ওয়ালা মাংস খান তাহলে পরিমান ১৫০ গ্রাম খাবেন, সপ্তাহে একবার ( ৪-৫ পিছ)।
এভারেজে সবাই এত গরু বা খাসী খায়, খেয়াল করলে দেখবেন হার্টে ব্লক এখন লোকজনের খুব বেশী হচ্ছে। সেসব মানুষেরও হচ্ছে যাঁরা তেমন গরু মাংস খায়না বিশেষ করে সনাতন ধর্মের লোক। কিন্তু ওই ভোজ্য তেল, ওই ভাজা পোড়া, ওই সিঙ্গারা-সামুচা, তেল সমৃদ্ধ তরকারী তারা খায়। খুব সম্ভবত তেলে থাকা ট্রান্স ফ্যাট থেকেই, যারা গরু খায়না, তাদেরও হার্টেও ব্লক হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্রান্ডের কোম্পানীর সয়াবীন তেলে ট্রান্সফ্যাট কতটুকু থাকে আমাদের জানা নেই। যদি লেখা থাকে প্রতি সার্ভিং এ ট্রান্সফ্যাট ০ গ্রাম তাহলে সর্বনিম্ন পরিমান আছে ০.৫ গ্রাম। কিন্তুু তাও বেশী খেতে পারবেন না দিনে ৪০ গ্রামের বেশী ওই তেল পেটে গেলে প্রবলেম। তবে বাহিরের ভাজা পোড়া থেকে অনেক ভাল হবে আশা করি।
এবার ডাইরেক্ট ভ্যালু দিচ্ছি, USDA/canada রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী দিনে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল খেলে তা সেইফ, মানে সপ্তাহে ২১০০ মিলিগ্রাম। দিনে ১২ গ্রাম (সপ্তাহে ৮০ গ্রাম) স্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে তা সেইফ। আর ট্রান্সফ্যাট? দিনে মাত্র ২ গ্রাম (মানে সপ্তাহে ১৪ গ্রাম) এর বেশী খেলেই হার্টে ব্লক।
যদি দীর্ঘকাল খেতে থাকেন তবে কোন কোন এজেন্সী বলছে ট্রান্সফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিতে।
কিন্তু সেটা কি ভাবে সম্ভব না? বাণিজ্যিক ভোজ্য তেলে একটুতে থাকেই ট্রেস এমাউন্ট।
গরু-খাসী যদি সপ্তাহে ৩৫০ গ্রাম খান, তাহলে এই লিমিট ক্রস করবেনা, আপনি ইনশাআল্লাহ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবেন। যদি সাপ্তাহে ৩৫০ গ্রামের বেশী খান তাহলে ঝুঁকিতে পড়বেন। এখন আপনি একদিনেই ৩৫০ গ্রাম খাবেন, নাকি ২-৩ দিন মিলে ৩৫০ গ্রাম খাবেন , তা আপনার ব্যাপার।
গরু-খাসীর মাংস আসলে রেড মীট খুব পুষ্টিকর খাদ্য, এতে প্রচুর পরিমান আয়রন, জিংক, ফসফরাস, লিপয়িক থাকে। শরীর সুস্থ থাকবে, ব্রেনে-মাসলে শক্তিপাবেন, যদি এই লিমিটে খেতে পারেন। শুধুমাত্র মাত্রার বেশী খেলে প্রবলেম হবে, বেশী খাবেন না, কিন্তুু বাদও দিবেন না, দুর্বল হয়ে যাবেন।
গরুর দুধঃ- যদিও এটাতে যথেষ্ঠ ফ্যাট থাকে কিন্তুু ট্রান্সফ্যাট নেই, স্যাচুরেটেড ফ্যাটও কম, দিনে এক কাপ পর্যন্ত অসুবিধা নেই। দুধে আছে, ক্যালসিয়াম, বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এবং ভিটামিন ডি, মাঝে মধ্যে হলে নো প্রবলেম। দুধ থেকে আসা চীজ খেতে চান, দিনে একটা স্লাইস ( ৩০ গ্রাম ) হলে নো প্রবলেম।
ঘিঃ- ঞি খুব ঝুঁকিপূর্ণ, প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসলে ট্রান্সফ্যাট থাকবে। তেল যত ঘন বা সলিড হবে ততো খারাপ হবার সম্ভাবনা।
তার মানে বাংলাদেশের হার্ট এটাকের অন্যতম প্রধান কারণ হল আসলে ভোজ্য তেল, সয়াবীন / অন্যান্য তেল এ থাকা মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যেটা সামান্য খাবার কারনেই দৈনিক লিমিট ক্রস করে যাচ্ছে, এবং মানুষ হার্ট এটাকের স্বীকার হচ্ছে মাত্র ৩০-৪০-৫০ বছর বয়সেই।
আর দোষ হচ্ছে সব ওই নিরীহ অবলা গরুর ছাগলের উপর, যদিও গরু কিছুটা দায়ী। কারণ অনেকে বেশী গরু খায়, খালী চর্বি খায়, ঝোল খায়, গরুর সাথে যে ঝোল থাকে সেটা কিন্তুু আবার সয়াবীন তেলে ভরা, গরুর চর্বি থেকে ওইটা বেশী খারাপ।
কাচ্চিঃ- কাচ্চিতে তো মাংস কম থাকে, কিন্তু যেই তেলটা পোলাউর সাথে থাকে ওটা খারাপ, ওটার মধ্যে শুধু ট্রান্সফ্যাট আর ট্রান্সফ্যাট। কোন অবস্থার পরিপেক্ষিতে যদি এক বার বাহিরে (হোটেল, রেস্তোরা) কাচ্চি খেতে হয়েছে তাহলে আগামী ১ মাস নো মাংস।
তাহলে এখন কিভাবে চলতে হবে?
★ গরু-খাসীর রানের মাংস বা অন্য অঞ্চলের চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়া যাবে, কিন্তু লিমিট হল সপ্তাহে ৩৫০ গ্রাম জনপ্রতি, একটু আধটু চর্বি আসলে সমস্যা নাই, শুধু চর্বির দলা বা মাংস-চর্বির ৫০-৫০ মিক্স পীসগুলো এড়িয়ে চলুন।
★ আমরা প্রচুর ঝোল খাই, সমস্যা হল ঝোলে তো ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ তেল থাকে, ওই তেলের ট্রান্সফ্যাট হল বিশাল প্রবলেম, কাজেই ঝোল খেতে হবে খুব কম জাস্ট কোনরকম ভাতকে ভেজানো। পানি বেশী দিয়ে ঝোল বেশী করতে পারেন, কিন্তু তেলের পরিমান হবে প্রতি লিটারে ৫০-৬০ মিলি লিটার, তেল কমিয়ে, মসলা একটু বেশী দিয়ে হলেও তরকারী রাঁধতে হবে।
★ যিনি রাঁধবেন তাকে বলে দিবেন যেন গরুর-খাসীর মাংসে খুব কম তেল দেয়। প্রতি কেজিতে মাত্র ৫০-৬০ এম এল এনাফ, এরপর যখন রান্না হয়ে যাবে তখন তেলটা উপরে ভেসে উঠবে, ভেসে উঠা তেল ফেলে দিতে পারেন(আবার ভাইবেন না টাকা দিয়ে কেনা তেল ফেলে দিব)। ডালে, তরকারীতে তেল কম দিতে হবে, প্রতি লিটারে ৫০ -৬০ এম এল।
★ বাহিরের ভাজা পোড়া খাবেন না, সিঙ্গারা - সমুচা-পরোটা এসব যদি খেতেই হয় প্রয়োজনে বাসায় করে খাবেন মাসে ১-২ বার, কিন্তু বাহিরে না। বাহিরে ব্যবহারিক খোলা তেলে ট্রান্সফ্যাট মাত্রাতিরিক্ত বেশী থাকে এবং তেলকে পোড়ালে সেটা বাতাসের সাথে বিক্রিয়া করে নিজে নিজে ট্রান্সফ্যাট হয়ে যায়। কাজেই যখন বাহিরে পোড়া তেল খাচ্ছেন ডাইরেক্ট সায়ানাইড খাচ্ছেন।
★ ফাস্টফুডে কিন্তুু ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ তেল দিয়েই ভাজে সব কিছু, কাজেই ফাস্ট ফুড থেকে চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, প্রয়োজনে বাসায় তৈরি করে খান, কারণ বাসায় তো আপনি ব্র্যান্ডের তেল খাচ্ছেন যেটাতে ট্রান্সফ্যাট লিমিটেড।
★ বাহিরে যদি খেতেই হয় তাহলে রুটি-ভাত-রান্না করা মাছ মাংস এইসব খাবেন ভুলেও তেলে ভাজা কিছু খাবেন না। কাচ্চি-পোলাও-গরু-মুরগী খেতে ইচ্ছে করলে নিজের বাসায় রান্না করা খান।
★ চিংড়ী মাছে গরু-খাসীর তুলনায় ডাবল কোলেস্টেরল থাকে, কাজেই চিংড়ী মাছ খেতে পারবেন 200 গ্রাম প্রতি সপ্তাহে এর বেশী নয়। তেলাপিয়া মাছে মার্কারী - লেড - ক্রোমিয়াম জমে, বিষাক্ত সুতারাং বাদ দিন খাওয়। সামুদ্রিক মাছ খেলে খুব ভাল সামুদ্রিক মাছের তেল ব্লক খুলে দিবে, তাই বেশী বেশী সামুদ্রিক মাছ খান, নদী-পুকুরের মাছও ভাল, মাছের তেল হল ভাল তেল, এইচডিএল থাকে।
যদি এমন কোন উৎস থেকে সয়াবীন তেল সংগ্রহ করতে পারেন যিনি হাইড্রোজেনেটেড করেন না, জাস্ট নরমাল ঘানি ভাঙ্গা তাহলে সেই তেল বেশী একটু খেলেও প্রবলেম নেই বড়জোর ভুড়ি বাড়বে কিন্তু হার্ট ব্লক হবেনা। ঘানিতে ভাংঙ্গা সয়ারিন তেলে ট্রান্সফ্যাট থাকেনা, তবে ওই তেল একটু পাতলা, সংরক্ষণ অসুবিধা মানুষ কিনতে চায়না।
সরিষাঃ- সরিষা যদি হাইড্রোজেনেটেড না করে নরমাল ঘানিভাঙ্গা না হয় তবে কিছুটা সেইফ। তবে সমস্যা হল, সরিষায় আবার মাটিতে থাকা মারকারী-লেড এইসব শোষণ করে, বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ায় এখন যেখানে সেখানে অনেক ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে, যেখান থেকে মার্কারী-লেড মাটিতে চলে যাচ্ছে, যদি সরিষা এমন মাটিতে হয় তাহলে সেটা সেইফ না, এটা বের করা সম্ভব না, যে সরিষা কোন মাটিতে হচ্ছে। কাজেই আমি রিকমেন্ড করিনা আর ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরিষা আসলে ওইটাও হাইড্রোজেনেটেড হবে।
হাইড্রোজেনেটেড না হলে সরিষা বা সয়াবীন দুইটাই এক।
প্রসঙ্গত,চট্টগ্রামের মেজবানী খাবারঃ-
মেজবানী তে অনেক জায়গায় (হোটেলের) গরুর কোন কিছু ফেলা হয়না, পুরো গরু সব চর্বি সহ পাক করে ফেলে, খেতে চরম স্বাদ হয়। তার উপর আছে, গরুর কলিজা, যেটাতে লেড-মার্কারী সহ সব বিষ জমা হয়। এতে আরও আছে, বাজারের ট্রান্সফ্যাট সমৃদ্ধ সয়াবীন তেল, কাজেই একটা ব্যাপক বিষাক্ত। কাজেই হোটেলের মেজবানী কিন্তু পিউর সায়ানাইড, খাবেন না, খাওয়াবেন না।
গ্রামীন মেজবানী তেল পরিমিত হলে ঝুঁকি কম।
শেষকথাঃ- যদি ভাজাপোড়া বেশী খান, বেশ তেল সমৃদ্ধ খাবার খান, তাহলে কিন্তু সিক্সপ্যাক নিয়েও আপনার হার্টে ব্লক হতে পারে ট্রান্সফ্যাটের কারণে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে। কারণ আপনি ক্যালরী মেইন্টেইন করেই খাচ্ছেন কিন্তুু ট্রান্সফ্যাট গিয়ে সব জমতেছে হার্টের আর্টারীর মধ্যে।
তার মানে বাংলাদেশের জন্য ডায়েট কিন্তুু ঝুঁকিপূর্ণ, চিকন হবেন, বাট বুকে ব্লক হবে। যদিও বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট মেইন্টেইন করেনা সরকার।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হার্টের ব্লক হওয়া থেকে রক্ষা করবে এটাই প্রার্থনা।

No comments:

Post a Comment